আমার ছায়া

কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন — ‘ মানুষ এ পৃথিবীতে ঢের দিন আছে , সময়ের পথে ছায়া লীন — হয়নি এখনও তার। ’ আমারও একটি ছায়া আছে , যা এখনও সময়ের স্রোতে মিশে যায়নি। ছায়া আছে বলেই হয়তো আমি আছি। যেদিন আর উঠে দাঁড়াব না , সেদিন আমার ছায়াও থাকবে না — দেহের সঙ্গে মিলিয়ে যাবে অস্তিত্বের সীমানায় । নিজেকে সম্পূর্ণ নিজের চোখে দেখতে পাই না , কিন্তু ছায়াকে দেখতে পাই — স্পষ্ট , অবিকল। ছায়ার মাধ্যমে আমার দেহ তার আকৃতি আমাকে দেখায় । আমার ছায়াটি বড় মায়াময়! তার রং কালো। আমি যতই রঙিন পোশাক পরি না কেন , ছায়া সব রং শুষে নেয় , তবু তার কালো রং অটুট থাকে। কালোই যেন চিরন্তন , কালোই গভীরতার প্রতীক । কখনও মনে হয় , ছায়াটি আমার দেহের নয় — আমার আত্মার প্রতিচ্ছবি। আত্মার ছায়া হয় না , কারণ সে নিরাকার। কিন্তু যখন আত্মা আমার মাঝে কায়া পায় , তখনই তার ছায়ার জন্ম হয়। ঠিক যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন — ‘ তোমার আলোয় নেই তো ছায়া , আমার মাঝে পায় সে কায়া। ’ যেদিন আত্মা আমায় ছেড়ে যাবে , সেদিন ছায়াও মিলিয়ে যাবে। ততদিন পর্যন্ত — ‘ বিকেলের প্রান্তে তুমি দাঁড়িয়ে আমার ছায়া ছুঁয়ে যাবে তোমায়। ’