Posts

Showing posts with the label লাইফস্টাইল

সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য — কে জানে?

Image
একসময় এক বৃদ্ধ কৃষক বাস করতেন এক চিনা গ্রামে। তাঁর ছিল একমাত্র ছেলে ও একটি ঘোড়া। ঘোড়াটি ছিল তাঁর জীবিকার অন্যতম অবলম্বন — জমিতে হাল টানা থেকে শুরু করে বাজারে যাতায়াত পর্যন্ত সবকিছুই এর ওপর নির্ভরশীল ছিল । একদিন এক ঝড়বৃষ্টির রাতে ঘোড়াটি পালিয়ে গেল। প্রতিবেশীরা সান্ত্বনা দিতে এসে বলল , “ভীষণ দুর্ভাগ্য তোমার! একমাত্র ঘোড়াটিই তো পালিয়ে গেল!” কৃষক শান্তভাবে বললেন , “সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য — কে জানে ? ” কিছুদিন পর , হারিয়ে যাওয়া ঘোড়াটি ফিরে এল , সঙ্গে নিয়ে এল আরেকটি বন্য ঘোড়া। এবার প্রতিবেশীরা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল , “কী সৌভাগ্য! এখন তোমার দুটি ঘোড়া!” কৃষক মৃদু হাসলেন , “ সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য — কে জানে ? ” পরদিন , কৃষকের ছেলে নতুন ঘোড়াটিকে পোষ মানাতে গিয়ে পড়ে গেল এবং তার পা ভেঙে গেল। প্রতিবেশীরা দুঃখ প্রকাশ করে বলল , “কি দুর্ভাগ্য! তোমার একমাত্র ছেলের পা ভেঙে গেল!” কৃষক আগের মতোই বললেন , “ সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য — কে জানে ? ” কয়েক সপ্তাহ পর , যুদ্ধ শুরু হল। রাজ্যের সৈন্যরা সব যুবকদের বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়ে গেল। কিন্তু কৃষকের ছেলেকে নেয়নি — কারণ তার পা ভাঙা। এবার প্রতিবেশী...

স্বাধীনতা অন্তরে বাহিরে

Image
দড়ি দিয়ে খুঁটিতে বাঁধা একটি গরু। খুঁটিকে কেন্দ্র করে তার চারপাশে রচিত হয়েছে এক বৃত্তাকার তৃণক্ষেত্র — যেন একটি সীমিত জগৎ , যেখানে সে স্বাধীন , কিন্তু সেই স্বাধীনতা কেবল দড়ির দৈর্ঘ্য পর্যন্ত বিস্তৃত। এই দৃশ্যটি শুধু একটি গরুর নয় , এটি যেন এক প্রতীক — আমাদের জীবনের , আমাদের অস্তিত্বের। আমরাও যেন সেই খুঁটিতে বাঁধা প্রাণী। জন্মের পর থেকেই আমাদের ঘিরে তৈরি হয় শৃঙ্খল — সামাজিক নিয়ম , পারিবারিক অনুশাসন , সংস্কার , ধর্ম , রাষ্ট্র — সব মিলিয়ে এক অদৃশ্য কিন্তু প্রভাবশালী পরিধি। আমরা চলি , ঘুরি , বাঁচি — কিন্তু সেই চলার গণ্ডি নির্ধারিত অন্য কারও হাতে। এই পৃথিবীতে আমাদের বিচরণ যেন পূর্বনির্ধারিত এক পরিধির মধ্যেই সীমাবদ্ধ । জীবনের পথচলায় আমরা হাসি , কাঁদি , গড়ি ও ভাঙি। কখনও সাফল্যে উদ্ভাসিত হই , কখনও ব্যর্থতায় ক্লান্ত। কিন্তু আমাদের দৌড় সেই দড়ির দৈর্ঘ্য পেরোয় না। কারও দড়ি দীর্ঘ , কারও সংক্ষিপ্ত — কিন্তু দড়ি আছে সবারই। এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেই কেউ খুঁজে নেয় গভীর অর্থ , কেউ বা কেবল টিকে থাকার সংগ্রামে ক্লান্ত হয় । তবে , এখানেই শেষ নয়। মানুষ শুধু শরীর নয় — সে মন , আত্মা , চেতনা। দড়ি দিয়ে বাঁধা যায় দে...

ফিরে দেখা: একটি জীবনের পাণ্ডুলিপি

Image
আর একটি বসন্ত খসে পড়ল বরাদ্দ সময় থেকে। পার হয়ে গেল আরও একটি বছর। আর একটি নববর্ষ ধরা দিল উৎসবের আলোয়। ক্যালেন্ডারের পাতায় যতই নতুন সংখ্যা যোগ হোক , আমাদের জীবনের ঘড়িতে একটুখানি সময় ফুরিয়ে যায় চুপিচুপি। এইভাবেই ধাপে ধাপে এগিয়ে চলে জীবন — এক অনিবার্য , অপরিবর্তনীয় গন্তব্যের দিকে । তবু প্রশ্ন থেকেই যায় — জীবন কি কেবল গন্তব্যের দিকে ধাবমান এক যাত্রা ? যদি গন্তব্য একদিন পৌঁছানোর জন্যই নির্ধারিত থাকে , তাহলে তো যাত্রাই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই যাত্রার মধ্যেই গাঁথা থাকে জীবনের আসল গল্প — যেগুলো কখনও আনন্দে পূর্ণ , আবার কখনও গাঢ় বিষাদের রঙে রাঙানো। যাত্রাপথেই মানুষ খুঁজে পায় চেনা-অচেনা রূপ , হারায় ও ফিরে পায় নিজেকে বারবার । জীবনের প্রারম্ভে মানুষ এক অনন্য অভিযাত্রায় পা রাখে — শিশুর প্রথম কাঁদা , প্রথম হাঁটা , প্রথম কথা বলা। সে শেখে ; তার চারপাশের জগৎটাকে চিনতে শেখে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার শরীর হয় বলিষ্ঠ , মন হয় কৌতূহলী। জীবনের প্রথম পর্বে সে সংগ্রহ করে জ্ঞান , অভিজ্ঞতা , সম্পর্ক। সে স্বপ্ন দেখে , সেই স্বপ্নের পেছনে ছুটে চলে ক্লান্তিহীন । কিন্তু পরিবর্তন প্রকৃতির শাশ্বত নিয়ম। সময়ের দ্বি...

অন্তরতর শান্তি

Image
পাশ্চাত্যে শান্তির ধারণা সাধারণত যুদ্ধবিহীন অবস্থার সঙ্গে যুক্ত। শান্তির প্রতীক ‘শ্বেত কপোত’ও জনপ্রিয় হয়েছে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে। কিন্তু আমরা যখন শান্তির কথা বলি , আসলে কী বুঝি ? কেউ যদি জিজ্ঞেস করে , আপনি কি আজ শান্তিতে আছেন ? — উত্তর কী হবে ? আপনার পরিবার , প্রতিবেশী বা সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক কি শান্তিপূর্ণ ? শান্তির একটি সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞার অভাব রয়েছে। এই কারণেই নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক হয়। সাধারণত অস্ত্রনিয়ন্ত্রণ , নিরস্ত্রীকরণ , যুদ্ধের অবসান ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গঠনে অবদানের জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়। তবে এটি নিঃসন্দেহে একটি রাজনৈতিক পুরস্কার , যার প্রাপক নির্বাচনের মাধ্যমেই এর অন্তর্নিহিত রাজনীতি স্পষ্ট হয় । একটি সংজ্ঞা অনুসারে , শান্তি হল মানুষের প্রকৃতি , পরিবেশ ও বিশ্বজগতের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানের অবস্থা। যখন সমাজে দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে এবং ভয় ও হিংসা দূর হয় , তখনই প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয় । প্রাচ্যের দর্শনে শান্তি কেবল যুদ্ধের অনুপস্থিতি নয় — সেখানে শান্তি এক জীবনযাপন পদ্ধতি । যেমন , বৌদ্ধ দর্শনে অহিংসা ও অষ্টমার্গের চর্চার মাধ্যমে অ...

একটি রেখা না মুছে ছোট করা

Image
মোগল সম্রাট আকবরের রাজসভায় ছিলেন নয়জন মেধাবী উপদেষ্টা , যাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বীরবল। তাঁর সূক্ষ্ম বুদ্ধি ও রসবোধের জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। সম্রাট আকবর প্রায়ই মজা করে বীরবলের বুদ্ধির পরীক্ষা নিতেন এবং কখনও কখনও তাঁকে বোকা বানানোর চেষ্টা করতেন । একদিন সম্রাট বীরবলকে মাটিতে একটি সরল রেখা আঁকতে বললেন। বীরবল নির্ধারিত রেখাটি এঁকে দিলেন। এরপর সম্রাট নির্দেশ দিলেন , রেখাটি ছোট করতে হবে , তবে কোনও অংশ মোছা যাবে না । প্রথম দেখায় কাজটি অসম্ভব মনে হচ্ছিল। উপস্থিত সবাই ভাবলেন , এবার বীরবল নিশ্চয়ই পরাজিত হবেন। কিন্তু বীরবল কিছুক্ষণের মধ্যেই এমন এক সমাধান বের করলেন , যা দেখে সবাই বিস্মিত হয়ে গেলেন। তিনি রেখার পাশে আরও বড় একটি রেখা এঁকে দিলেন , যা আগের রেখাটিকে আপনা থেকেই ছোট দেখাতে শুরু করল । সম্রাট আকবর বীরবলের বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হলেন । গল্পের শিক্ষণীয় দিক: এই গল্প আমাদের শেখায় যে , প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে চাইলে অন্যের ক্ষতি বা হেয় না করে নিজের সামর্থ্য ও দক্ষতাকে উন্নত করা প্রয়োজন। নিজের অবস্থান আরও শক্তিশালী করে তুললে প্রতিদ্বন্দ্বী আপনা থেকেই দুর্বল হয়ে যাবে । বর্তমান প্রাসঙ্...