Posts

Showing posts from December, 2024

আকাশ-পৃথিবীর বিরহ

Image
আকাশ আর পৃথিবীর সম্পর্কটি প্রণয়ের , আবার চিরবিরহের। এ সম্পর্কের উল্লেখ পাওয়া যায় বিভিন্ন দেশের প্রাচীন পুরাণকাহিনিতে। অধিকাংশ পুরাণে আকাশ পুরুষ এবং পৃথিবী নারী হিসেবে কল্পিত হয়েছে। ভারতীয় পুরাণ অনুসারে , পৃথু নামে এক রাজা ছিলেন , যিনি প্রথম সত্যিকারের রাজা হিসেবে পরিচিত। তিনি পৃথিবীর ভূমিকে সমতল করেছিলেন। অথর্ববেদে বলা হয়েছে , পৃথু লাঙ্গল দিয়ে চাষ শুরু করেছিলেন এবং কৃষির আবিষ্কার তাঁরই কৃতিত্ব। পৃথুর স্ত্রীর নাম পৃথ্বী। এখান থেকেই আমাদের গ্রহের নাম হয়েছে ‘ পৃথিবী ’, যা নারীরূপে কল্পিত। তবে মিশরীয় পুরাণে এর ঠিক উল্টো। সেখানে আকাশ নারী এবং পৃথিবী পুরুষ। মিশরীয় পুরাণ অনুসারে , পৃথিবী সৃষ্টির পর ঈশ্বর পৃথিবীকে রক্ষার জন্য কয়েকজন দেব-দেবী প্রেরণ করেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন আকাশের দেবী নুট , পৃথিবীর দেবতা জেব এবং বায়ুদেবতা শু। নুট - জেব - শু নুট প্রথমে ছিলেন রাতের আকাশের দেবী , কারণ  তখনও  সূর্যের জন্ম হয়নি , ফলে দিনও ছিল না। সূর্যের জন্মের পর নুট পুরো আকাশের দায়িত্ব পান। নুট শব্দের অর্থ ‘ রাত্রি ’ । ধারণা করা হয় , এখান থেকেই ইংরেজি শব্দ ‘ নাইট ’ এসেছে। নুটের গায়ের রঙ ছিল নীল , আর ত...

একটি রেখা না মুছে ছোট করা

Image
মোগল সম্রাট আকবরের রাজসভায় ছিলেন নয়জন মেধাবী উপদেষ্টা , যাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বীরবল। তাঁর সূক্ষ্ম বুদ্ধি ও রসবোধের জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। সম্রাট আকবর প্রায়ই মজা করে বীরবলের বুদ্ধির পরীক্ষা নিতেন এবং কখনও কখনও তাঁকে বোকা বানানোর চেষ্টা করতেন । একদিন সম্রাট বীরবলকে মাটিতে একটি সরল রেখা আঁকতে বললেন। বীরবল নির্ধারিত রেখাটি এঁকে দিলেন। এরপর সম্রাট নির্দেশ দিলেন , রেখাটি ছোট করতে হবে , তবে কোনও অংশ মোছা যাবে না । প্রথম দেখায় কাজটি অসম্ভব মনে হচ্ছিল। উপস্থিত সবাই ভাবলেন , এবার বীরবল নিশ্চয়ই পরাজিত হবেন। কিন্তু বীরবল কিছুক্ষণের মধ্যেই এমন এক সমাধান বের করলেন , যা দেখে সবাই বিস্মিত হয়ে গেলেন। তিনি রেখার পাশে আরও বড় একটি রেখা এঁকে দিলেন , যা আগের রেখাটিকে আপনা থেকেই ছোট দেখাতে শুরু করল । সম্রাট আকবর বীরবলের বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হলেন । গল্পের শিক্ষণীয় দিক: এই গল্প আমাদের শেখায় যে , প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে চাইলে অন্যের ক্ষতি বা হেয় না করে নিজের সামর্থ্য ও দক্ষতাকে উন্নত করা প্রয়োজন। নিজের অবস্থান আরও শক্তিশালী করে তুললে প্রতিদ্বন্দ্বী আপনা থেকেই দুর্বল হয়ে যাবে । বর্তমান প্রাসঙ্...

মোনালিসা ইফেক্ট: চোখের মায়া

Image
টেলিভিশনের সামনে বসে খবর শুনছিলাম। হঠাৎ মনে হল , সংবাদপাঠিকা যেন একদৃষ্টে আমার দিকেই তাকিয়ে খবর পড়ছেন। পরীক্ষা করার জন্য আমি একবার বাঁ দিকে সরে গেলাম , তারপর ডান দিকে। অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম , তার দৃষ্টি যেন আমার দিকে লেগেই আছে। এমন অনুভূতি তৈরি হল , যেন তিনি আমার প্রতিটি নড়াচড়া অনুসরণ করছেন । প্রথমে মনে হল , হয়তো এটি কোনও প্রযুক্তিগত কৌশল বা বিশেষ নজরদারি পদ্ধতির অংশ। কিন্তু পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম , এটি আসলে এক ধরনের অপটিক্যাল ইলুশন বা দৃষ্টিভ্রম , যা ‘ মোনালিসা ইফেক্ট’ নামে পরিচিত । মোনালিসা ইফেক্ট কী ? মোনালিসা ইফেক্ট হল এমন এক দৃষ্টিভ্রম যেখানে মনে হয় কোনও চিত্র , বিশেষত মানুষের ছবি , সরাসরি আপনার দিকেই তাকিয়ে আছে , তা আপনি ছবির সামনে , পাশে বা কোণ থেকেও দেখুন না কেন। এই ইফেক্টের নামকরণ হয়েছে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির বিখ্যাত চিত্রকর্ম মোনালিসা থেকে। ঐতিহাসিকভাবে লক্ষ করা গেছে , মোনালিসার চোখে এমন এক চিত্রকৌশল রয়েছে , যা দেখে মনে হয় তিনি দর্শকের দিকে সরাসরি তাকিয়ে আছেন , দর্শক যে দিকেই থাকুন না কেন । কীভাবে এটি কাজ করে ? মোনালিসা ইফেক্ট তৈরির জন্য ছবি আঁকার সময় চোখের মণি এমনভাব...