কে বাঙালি?

আজকাল রাজপথে স্লোগান ওঠছে — ‘তুমি কে? আমি কে? বাঙালি, বাঙালি!’ কেন এই স্লোগান? আমরা সবাই কি বাঙালি নই? আমাদের কেউ কেউ নিজেদের কি বাঙালি মনে করেন না?

১৯৭২-এর সংবিধান অনুযায়ী — ‘বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালি এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবেন’ (প্রজাতন্ত্র>নাগরিকত্ব ৬:)এখানে বাংলাদেশ নামক নতুন দেশটির সকল বাসিন্দাকে বাঙালি বলা হয়েছেচাকমা নেতা মানবেন্দ্র লারমা সংসদে এর প্রতিবাদ করে বলেছিলেন — ‘কোনও সংজ্ঞা বা যুক্তির অধীনে চাকমা বাঙালি হতে পারে না বা বাঙালি চাকমা হতে পারে না।’

সাধারণভাবে, যারা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে একটা বিশিষ্ট জীবনযাত্রা-প্রণালি, ভাষা ও সংস্কৃতি অনুসরণ করেন তাদের বাঙালি বলা হয় তবে বাংলা ভাষায় কথা বললেই কেউ বাঙালি হয়ে যায় না যেমন ইংরেজি ভাষায় কথা বললেই কেউ ইংরেজ হয়ে যায় না বাঙালি হতে হলে বাঙালির জীবনযাত্রা-প্রণালি ও সংস্কৃতি অনুসরণ করতে হয় সব কিছুর উপরে যে জিনিসটি অপরিহার্য তা হচ্ছে বাঙালির বিশেষ নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হওয়া

নৃতাত্ত্বিক জাতি বলতে আমরা এমন এক জনসমষ্টিকে বুঝি যাঁদের সকলের মধ্যেই জীন-কণা (Gene) ও ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’ ভিত্তিক কতগুলো বিশিষ্ট অবয়বগত সাদৃশ্য আছে। যেমন, মাথার চূলের বৈশিষ্ট্য ও রঙ, গায়ের রঙ, চোখের রঙ ও বৈশিষ্ট্য, দেহের দীর্ঘতা, মাথার আকার, মুখের গঠন, নাকের আকার, শোণিত বর্গ বা বিপি’ (বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয়/অতুল সুর)। 

অর্থাত্‍ জিনগতভাবে বাংলাদেশের মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলেই বাঙালি সকলেই একই নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী কেউ তার ধর্মবিশ্বাস পরিবর্তন করতে পারেন, কিন্তু নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করতে পারেন না সে কারণে, একজন চাকমার পক্ষে বাঙালি হওয়া সম্ভব না, যেমন সম্ভব না বাঙালির চাকমা হওয়া বাঙালি এবং চাকমা দুটি পৃথক জাতিসত্তা। পৃথক তাদের নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য তবে উভয়ই নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশী 

Popular posts from this blog

দুর্গাপূজা কেন সর্বজনীন উত্‍সব